দাম্পত্য
হিংসার প্রকার
দাম্পত্য হিংসার অনেকগুলো চেহারা হতে পারে। কখনও এটা খুবই স্পষ্ট, আবার কখনও খুব সূক্ষ্মভাবে দেখা দেয়। একে চিনতে সাহায্য করে এমন কিছু তথ্য এখানে দেওয়া হল।

মানসিক নির্যাতন
মানসিক নির্যাতন মূলতঃ ঘটে বারবার অপমানজনক কাজ বা শব্দের মাধ্যমে। নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি তার সঙ্গীকে সমালোচনা, নিন্দা বা হীন করে কিংবা তাকে ছেড়ে গিয়ে অথবা তাঁকে উপেক্ষা করে মানসিক নির্যাতন চালাতে পারে।
মানসিক নির্যাতন নির্যাতিতা নারীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। তাঁর সম্মান, মর্যাদা এবং মানসিক স্থিরতাকে নষ্ট করে।
অর্থনৈতিক নির্যাতন
অর্থনৈতিক নির্যাতন দাম্পত্য হিংসার সবচেয়ে কম পরিচিত একটি ধরণ। যদিও এটাও খুবই ঘন ঘন ঘটতে দেখা যায়। এই ধরনের নির্যাতনে পুরুষটি তার সঙ্গীর ওপরে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ জাহির করে। সঙ্গীর খরচাপাতির ওপর নজরদারি চালায় বা নিয়ন্ত্রণ চালায়। সংসারের অর্থনৈতিক খবরাখবর নিতে নিষেধ করে। তাঁকে তাঁর অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। তাঁর পেশাদার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাঁকে বাইরে কাজ করতে বাধা দেয় অথবা অন্যদিকে তাঁকে সংসারের সব খরচ ও প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য করে।
অর্থনৈতিক সহিংসতার ফলে নির্যাতিত মহিলা নিজের আর্থিক স্বাধীনতা হারান।
সম্মতি ছাড়া যে-কোনও কাজই নির্যাতন, এমনকি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও।
যৌন নির্যাতন
যৌন নির্যাতন ঘটে তখনই যখন একজন পুরুষ তার সঙ্গীর শরীরকে অসম্মান করে। সে তার নিজের সঙ্গে অথবা অন্য মানুষের সঙ্গে তাঁকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারে। তার ওপরে অবাঞ্ছিত যৌনক্রিয়া চালাতে পারে অথবা তার সঙ্গীকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রেমিক থাকার অভিযোগ তুলতে পারে। ঈর্ষাপরায়ণ ব্যবহার করতে পারে। তাঁকে পর্নোগ্রাফি দেখতে জোর করতে পারে। সে তার নিজের সঙ্গে অথবা অন্য মানুষের সঙ্গে তাঁকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারে। তার ওপরে অবাঞ্ছিত যৌনক্রিয়া চালাতে পারে অথবা তার সঙ্গীকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রেমিক থাকার অভিযোগ তুলতে পারে। ঈর্ষাপরায়ণ ব্যবহার করতে পারে। তাঁকে পর্নোগ্রাফি দেখতে জোর করতে পারে।
যৌন নির্যাতন নির্যাতিতা নারীর শারীরিক এবং মানসিক স্থিরতা নষ্ট করে দেয়।
সামাজিক নির্যাতন
সামাজিক নির্যাতন ঘটে যখন একজন পুরুষ তার সঙ্গীর পরিবারের সদস্য অথবা বন্ধুদের অপমান করে। তাঁর অথবা তাঁর সহকর্মীদের কাজের নিন্দে করে। তাঁর শখ নিয়ে মজা করে। তাঁকে বাইরে বেরোতে বাধা দেয়। মানুষজনের সামনে কুরুচিকর দৃশ্য তৈরি করে অথবা তাঁর আশপাশের লোকজনকে আতঙ্কিত করে তোলে।
এই নির্যাতন নির্যাতিতা নারীর সামাজিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
আধ্যাত্মিক অথবা ধর্মীয় নির্যাতন
আধ্যাত্মিক অথবা ধর্মীয় নির্যাতন মানসিক নির্যাতনের আরেক প্রকার যেখানে কোনও মানুষের নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে মস্করা বা ঠাট্টা করা হয়। এক্ষেত্রে একজন নিয়ন্ত্রণকারী পুরুষ তার সঙ্গীর ধর্ম পালনে অথবা ধর্মীয় স্থানে যেতে তাকে বাধা দেয়। কিংবা ধর্ম অনুশীলনে সে ব্যর্থ বলে তাঁকে অভিযুক্ত করে। সঙ্গীকে নিজের কাজে লাগাতে অথবা নিজের নির্যাতনের সমর্থনে কিংবা নিজের কর্তৃত্ব বা প্রভাব খাটাতে সে ধর্মকে ব্যবহারও করতে পারে।
এই ধরনের নির্যাতন নির্যাতিতা নারীর মধ্যে লজ্জা এবং/অথবা সংশয়, দ্বিধা, অবিশ্বাস তৈরি করে। এর ফলে অনেক সময় তাঁকে নিজের ধর্ম পালন থেকে সরেও আসতে হয়।
শারীরিক নির্যাতন
শারীরিক নির্যাতন অনেক রকমের হতে পারে এবং বিভিন্ন মাত্রায় এটা প্রকাশ পায়। যেমন, কাঁপানো, ধাক্কা দেওয়া, ঘুষি মারা, ফেলে দেওয়া, কামড়ানো, অস্ত্র নিয়ে হুমকি দেওয়া, দম বন্ধ করা এবং আটকে রাখা।
এর ফলে নির্যাতিতা নারীর গুরুতর আঘাত তৈরি হতে পারে এবং শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য এটা চরম মারাত্মক হতে পারে।
মৌখিক নির্যাতন
সঙ্গীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য অথবা অপমান করতে একজন লোক মুখের ভাষাকে ব্যবহার করতে পারে। এর অনেকগুলি আলাদা আলাদা ধরণ এবং চেহারা রয়েছে। যেমন অপমান করা, নিন্দে করা, হুমকি দেওয়া, ব্ল্যাকমেইল করা, চিৎকার করা, আদেশ দেওয়া এবং ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ ও কটাক্ষ করা।
সাইবার ভায়োলেন্স
সাইবার ভায়োলেন্স মানসিক নির্যাতনের আরেক প্রকার। এক্ষেত্রে অপরাধী ব্যক্তি দূরে অন্যত্র থেকে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে (ই-মেইলে, টেক্সট মেসেজে, সোশ্যাল মিডিয়ায়) এই কাজ করে। বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণ সম্পর্কে এটা খুবই প্রচলিত।
এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন, জিপিএস লোকেশন ট্র্যাক করে, গোপনে নজর রেখে, ক্রমাগত ফোন করে অথবা মেসেজ করে বিরক্ত করে, অপমানজনক ছবি অথবা মেসেজ পোস্ট করে, ঠকায়, পরিচয় লুকিয়ে।
যদি আপনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, দ্বিধাহীনভাবে ৯১১
নম্বরে পুলিশে অথবা ৫১৪-৮৭৩-৯০১০ কিংবা ১-৮০০-৩৬৩-৯০১০ এই নম্বরে SOS ভায়োলেন্স কংজুগল-এ ফোন করুন।
এই পরিষেবা সবসময় চালু আছে।