দাম্পত্য হিংসার পরিণতি

যে-কোনও প্রকারেই এটা আসুক না কেন, দাম্পত্য হিংসা তার ছাপ রেখে যায়, কখনও তা নির্যাতিতা নারীর শরীরে অথবা মনে স্থায়ী ছাপও ফেলতে পারে।

মানসিক যন্ত্রণা

দাম্পত্য হিংসা নির্যাতিতা নারীর মানসিক স্থিতাবস্থা এবং স্থিরতাকে নড়িয়ে দেয়। ক্রমাগত তাঁকে একা করে দেয়। ভয় অথবা অপমানজনক অবস্থা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস অথবা ডিপ্রেশনে নিয়ে যায়। এর লক্ষণগুলি হল: যন্ত্রণা, আতঙ্ক অথবা প্যানিক অ্যাটাক, খিটখিটে বা বিরক্তি, ভয়, দুঃখ, লজ্জা, রাগ, অসহায় অনুভূতি, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধবোধ, আত্মবিশ্বাস হারানো, মনোবল হারানো, নিজেকে সরিয়ে নেওয়া, কোনও কিছুতে অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ না পাওয়া ইত্যাদি।

মনের গভীরে চেপে থাকা এই রাগ, উদ্বেগ এবং আশঙ্কা তাঁকে আত্মধ্বংসী আচরণের দিকে নিয়ে যায় (ওষুধের ওপর নির্ভরতা, অত্যাধিক মাদক নেওয়া অথবা মদ খাওয়া, নিজের ক্ষতি করা, আত্মহত্যার চেষ্টা করা ইত্যাদি।)

শারীরিক সমস্যা

দাম্পত্য হিংসার ফলে অস্থিরতা এবং চাপ নির্যাতিতা নারীর শারীরিক অবস্থায় নানারকম প্রভাব ফেলে। যেমন: ঘুমের সমস্যা, হজমের অথবা খাওয়ার সমস্যা, অ্যালার্জি, মাংস পেশিতে যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণা, ত্বকের সমস্যা, দুর্বলতা বোধ, উদ্যমহীনতা, বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত মনে হওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, ঋতুজনিত সমস্যা, কেঁপে কেঁপে ওঠা, হাইপারটেনশন, মস্তিষ্কের সমস্যা ইত্যাদি।

শারীরিক আঘাত

শারীরিক দাম্পত্য হিংসা নির্যাতিতা নারীর শারীরিক স্থিতির ক্ষতি করে। তাঁদের গায়ে কালশিটে দাগ পড়তে পারে, দাঁত ভেঙে যেতে পারে, শরীরের কোনও অঙ্গ ভাঙতে পারে, পুড়ে যেতে পারে, ভেতরে রক্তপাত হতে পারে। কোনও কোনও আঘাত মারাত্মক গুরুতর হতে পারে। এই ধরনের আঘাত দীর্ঘকালীন ক্ষতি অথবা বরাবরের জন্য অক্ষমতার সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি এ-থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন

অনেক সময় পরিবার অথবা বন্ধুদের নিয়ে উদ্বেগের উৎসের কারণ হল দাম্পত্য হিংসা, যা নির্যাতিতা নারীর সামাজিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। তিনি তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের আস্থা এবং ভরসা হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে এক সময় তাঁদের সঙ্গে তাঁর বন্ধন পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে যায়।

লজ্জা, অপরাধবোধ, ভয়, অনিরাপত্তা, অবিশ্বাস অথবা এমনকি পরিত্যাগের ফলে কোনও কোনও নারী তাঁদের সামাজিক পরিমণ্ডল এড়িয়ে চলতে থাকেন। এর ফলে নতুন জায়গায় গিয়ে তাঁদের কাজকর্ম পাল্টাতে হয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য একেবারে তাঁদের সামাজিক জীবনের পরিবর্তন ঘটায়।

সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন

দাম্পত্য হিংসার পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণকারী পুরুষ পরিবারের মধ্যে নিজের হাতে পুরো ক্ষমতা তুলে নেয়, যেখানে নির্যাতিতা নারীর কোনও অস্তিত্বই নেই। এই ভারসাম্যহীনতা শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ওপরে গুরুতর প্রভাব ফেলে। তারা নির্যাতিতা মানুষটির কথায় অনেক সময়েই কান দেয় না। এই ভারসাম্যহীনতায় কোনও কোনও শিশু তাদের মাকে আগলানোর বা রক্ষা করার কথাও ভাবে, যা তাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বহিষ্করণ

দাম্পত্য হিংসা নির্যাতিতা নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলে। তিনি কোনও কাজ বা চাকরি পেতে সমস্যায় পড়েন। তিনি চাকরি হারাতেও পারেন অথবা তাঁকে আইনি ঝামেলা, কিংবা স্থান পরিবর্তন অথবা চিকিৎসাজনিত বিষয়, হাসপাতালের খরচ ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে হয়। টাকা সেক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। তাঁদের সামাজিক অবস্থা কিংবা শিক্ষা যা-ই হোক না কেন, দাম্পত্য হিঙ্গা তাঁদের দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দিতে পারে। অনেকে চাকরি ক্ষেত্র থেকে একেবারে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য গৃহহীন হয়ে পড়েন।

সামাজিক ব্যয়

দাম্পত্য হিংসা সমাজ কল্যাণ ব্যবস্থাকে বিরাট সংকটের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। এর ফলে আমাদের সমাজে অনেকখানি ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে। যেমন, মানুষের নিরাপত্তা পরিষেবার খরচ, নাগরিক এবং অপরাধজনিত আইনি কাজের খরচ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খরচ এবং সামাজিক পরিষেবার খরচ, বেকারত্ব ভাতা এবং রোজগারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

নিয়োগকারীদেরও দাম্পত্য হিংসার প্রভাব সামলাতে হয়। যেমন, কাজে অনুপস্থিতি, কাজের মান কমে যাওয়া, দক্ষতা হ্রাস পাওয়া, বিমার খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি।

যদি আপনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, দ্বিধাহীনভাবে ৯১১
নম্বরে পুলিশে অথবা ৫১৪-৮৭৩-৯০১০ কিংবা ১-৮০০-৩৬৩-৯০১০ এই নম্বরে SOS ভায়োলেন্স কংজুগল-এ ফোন করুন।
এই পরিষেবা সবসময় চালু আছে।