সুরক্ষা ব্যবস্থা

সুরক্ষা ব্যবস্থা একজন নির্যাতিতা নারীকে দাম্পত্য হিংসার কোনও ঘটনা ঘটলে অথবা ছাড়াছাড়ির সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।

নিজেকে আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত রাখতে আগাম পরিকল্পনা

দাম্পত্য হিংসা নির্যাতিতা নারীদের বারবার পুনরাবৃত্তি হওয়া ভয়াবহতা ও চাপের মুখে এনে ফেলে। এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা তাঁদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।

সুরক্ষা ব্যবস্থা হল এমন এক ব্যবস্থা যা দাম্পত্য হিংসায় নির্যাতিতা নারী প্রয়োগ করে থাকেন, যাতে কোনও ঘটনায় ঝুঁকির মুখে পড়ার মতো অবস্থা হলে তিনি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকেন। বিপদের সময় তাঁরা যাতে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে পারেন।

সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন

সুরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে হলে প্রথমেই সেইসব ঝুঁকিগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে যা কোনও বিপজ্জনক পরিস্থিতি কিংবা সিদ্ধান্ত থেকে হতে পারে। প্রত্যেকটি ঝুঁকির ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে যাতে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় তাঁদের কী কী সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

সফল হতে গেলে সুরক্ষা ব্যবস্থা সব সময় সেই ব্যক্তির বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে যার জন্য এটা প্রয়োগ করা হচ্ছে। নির্যাতিতা নারী প্রয়োজন মনে করলে তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য অথবা আইনজীবীরা তাঁকে সাহায্য করতে পারেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপরেই সেগুলি প্রয়োগের ভার বর্তায়।

সুরক্ষা ব্যবস্থার কিছু উদাহরণ

  • যেখানে আপনি আশ্রয় পেতে পারেন (যেমন, কোনও বন্ধুর বাড়ি, পরিবারের সদস্য অথবা প্রতিবেশীদের বাড়ি কিংবা মহিলাদের জন্য কোনও শেল্টার) এরকম কোনও জায়গা চিহ্নিত করুন।
  • আপনার ব্যক্তিগত জরুরি জিনিসপত্র ভরে (জামাকাপড়, ঘরের চাবি, টাকা, জরুরি কাগজপত্র ইত্যাদি) ব্যাগ গুছিয়ে নিন। একইসঙ্গে আপনার সন্তানের জিনিসও নেবেন। আপনার সঙ্গীর একটি ছবিও নেবেন, যাতে প্রয়োজন হলে পুলিশ তাকে সহজে ধরতে পারে।
  • ব্যাগটিকে নিরাপদ এবং গোপন কোনও জায়গায় (পরিবারের কারও বাড়িতে অথবা কোনও বন্ধু ও প্রতিবেশীর বাড়িতে, কোনও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে রাখুন।
  • আপনি বিশ্বাস করেন এরকম কাউকে (বন্ধু, সহকর্মী, আইনজীবী) বিষয়টি বলুন।
  • অন্য ঠিকানা থেকে আলাদা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন।
  • বাড়ি থেকে বেরোবার একটা কারণ বের করুন।
  • বাস অথবা ট্যাক্সির জন্য হাতে ক্যাশ টাকা রাখুন।
  • শিশুদের বিষয়টি যতটা সম্ভব বুঝিয়ে বলুন। তাদের বয়সের আন্দাজে সেই মতো বলবেন।

  • নিশ্চিত হোন যে আপনার এবং সন্তানদের জরুরি ব্যক্তিগত জিনিসগুলি আপনি প্রয়োজনে দ্রুত পেয়ে যাবেন।
  • বাড়ির ভেতরের নকশাটা পুরোটা মাথার ভেতরে ছকে রাখুন। সেই ঘরগুলো এড়িয়ে চলুন যেখানে আপনাকে আটকে ফেলা হতে পারে, অথবা যে-ঘরে ছুরি, চাকু বা কোনও অস্ত্র আছে এবং এমন জায়গার কথা ভেবে রাখুন যেখানে আপনি যেতে পারেন।
  • নিরাপদ কোনও জায়গা বেছে নিন যেখানে আপনি আশ্রয় নিতে পারবেন (আপনি বিশ্বাস করেন এমন কারও বাড়ি অথবা কোনও পাবলিক প্লেস)।
  • ছেলেমেয়েদের বলে রাখুন যদি জরুরি অবস্থা হয় তাহলে কী করতে হবে। যেমন, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে নেওয়া, দরজার কাছে থাকা, পুলিশে ফোন করা, প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া।

  • কিছু অভ্যেস পরিবর্তন করুন।
  • যদি সম্ভব হয় নিজের নতুন ঠিকানা গোপন রাখুন।
  • আপনার প্রাক্তন সঙ্গীকে ঘরে ঢুকতে দেবেন না, যত কম সময়ের জন্য সম্ভব তার সামনে উপস্থিত থাকুন এবং তার সঙ্গে বাক্যালাপ এড়িয়ে চলুন।
  • এ-ব্যাপারে নিশ্চিত হোন যে আপনার জরুরি কাগজপত্র আপনি যেন সহজেই পেতে পারেন, কারণ সেগুলি ভবিষ্যতের কার্যপদ্ধতিতে (যেমন, অভিবাসন, ডিভোর্স, সন্তানের হেফাজত ইত্যাদি) দরকারি হতে পারে।

যদি আপনাকে চুপিচুপি অনুসরণ করা হয়

  • পাবলিক প্লেস অথবা ব্যস্ত রাস্তায় থাকুন।
  • সবসময় নিজের সঙ্গে সেলফোন রাখুন এবং সময়মতো প্রয়োজন হলে পুলিশে ফোন করুন।

যদি আপনাকে উত্যক্ত কিংবা হয়রান করা হয়

  • ফোন কল, চিঠি এবং ই-মেইলের রেকর্ড রাখুন।
  • আপনার প্রতিবেশী, স্কুল এবং ডে কেয়ার সেন্টারকে জানিয়ে রাখুন।
  • নিজের ফোন নম্বর পরিবর্তন করুন। যদি প্রয়োজন হয় আপনার সন্তানকে অন্য স্কুলে ভর্তি করান।

যদি আপনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, দ্বিধাহীনভাবে ৯১১
নম্বরে পুলিশে অথবা ৫১৪-৮৭৩-৯০১০ কিংবা ১-৮০০-৩৬৩-৯০১০ এই নম্বরে SOS ভায়োলেন্স কংজুগল-এ ফোন করুন।
এই পরিষেবা সবসময় চালু আছে।